তাওবাহ: কেন ও কিভাবে
-----------------------------
আলেমগণ বলেন, সকল প্রকার পাপ, অপরাধ থেকে তাওবাহ করা ওয়াজিব তথা অবশ্য করণীয়।
তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা।
পরিভাষায় তাওবাহ হল: যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
---------------------------------------
পাপ বা অপরাধ দুই ধরনের হয়ে থাকে:
এক. যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা, নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা, সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।
দুই. যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদি।
---------------------------------------
প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবাহও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপসি'তি জরুরী।
শর্ত তিনটি হল:
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
---------------------------------------
দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবাহ করার শর্ত হল মোট চারটি:
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
(৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।
-----------------------------------------
মানুষের কর্তব্য হল, সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবাহ করবে, যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবাহ করে, অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবাহ না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবাহ হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তাওবাহ তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবাহ করলে সকল পাপ থেকে তাওবাহ বলে গণ্য হয় না।
যেমনঃ এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, ব্যভিচার করে, মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তাওবাহ করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তাওবাহ হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তাওবাহ হবে না। এর জন্য আলাদা তাওবাহ করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবাহ করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
তাওবাহ করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবাহ করতে হবে। তাওবাহ রক্ষা করা যায় না বা বারবার তাওবাহ ভেঙ্গে যায় এ অজুহাতে তাওবাহ না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ নয়। অন-র দিয়ে তাওবাহ করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে।
কুরআন, হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবাহ করা ওয়াজিব।
-----------------------------------------
বইঃ তাওবাহ: কেন ও কিভাবে
লেখকঃ আব্দুল্লাহ শাহিদ আব্দুর রাহমান